সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কি/ রেজিস্ট্রশন, এবং সুবিধাসমূহ

দেশের সকল মানুষের কথা বিবেচনা করে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করছে সরকার। দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে সকল মানুষের নিরাপত্তা, সুরক্ষা, নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যেন, পেনশন সুবিধাভোগ করতে পারেন, সরকার তাই সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার সুবিধা সমূহসহ থাকছে বিস্তারিত আলোচনা।

শুরুতে সমাজের চার শ্রেণির মানুষ এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন। চার ধরণের পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে। প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাসী ও সমতা এই চার ধরণের পেনশন স্কিম চালু হচ্ছে শুরুতে।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার (স্কিমের) প্রকারভেদ:

শুরুতে মোট চার ধরণের পেনশন স্কিম চালু করা হবে। এসব পেনশনের স্কিমের আওতায় কারা কারা সুবিধা পাবেন। কেমন সুবিধা পাবেন? কতোটাকা চাঁদা দিতে হবে? কিভাবে চাঁদা দিতে হবে? এসব কিছু থাকছে আমাদের আজকের আর্টিকেলে।

আরো পড়ুন: ডিজিটাল ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ

আগেই উল্লেখ করেছি যে, মোট ৪টি পেনশনের স্কিম নিয়ে চালু হচ্ছে সার্বজনীন পেনশন স্কিম। স্কিম চারটি হলো:

  • প্রগতি
  • সুরক্ষা
  • প্রবাসী
  • সমতা

প্রগতি:

দেশের বেসরকারি খাতে কর্মরত সকল নাগরিক পেনশনের “প্রগতি” স্কিমের আওতায় আসবেন। অর্থাৎ বেসরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ প্রগতি স্কিমের মাধ্যমে সার্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করবেন।

সুরক্ষ:

স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সুরক্ষা স্কিমের আওতায় আসবেন। অর্থাৎ যারা স্বকর্মসংস্থান করছেন, তাদের জন্য সুরক্ষা স্কিম থাকছে। স্বকর্মে নিয়োজিত বলতে কাদেরকে বুঝাবে? যেমন, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, কৃষিকাজ ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সুরক্ষা স্কিমের সদস্য হতে পারবেন।

প্রবাসী:

যারা বিদেশে অবস্থান করেন। যারা বিদেশে পড়ালেখা করেন। যারা বিদেশে চাকুরি করেন। বা ফ্যামিলি নিয়ে বসবাস করেন, তারা এই স্কিমের আন্ডারে আসবেন। অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশী যারা বিদেশে অবস্থান করছেন তারাও সার্বজনীন পেনশনের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সমতা:

বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নিম্ন আয়ের মানুষ, অতি নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের সঞ্চয় করার উপায় থাকেনা। বৃদ্ধ বয়সে যাদের চিকিৎসা করার টাকা থাকেনা। তাদের অবসরকালীন সময়ে বা বৃদ্ধ বয়সে যেন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকেন তাই তাদের জন্য এই সমতা স্কিল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমতা কর্মসূচির আওতায় যারা থাকবেন তারা যে, পরিমান চাঁদা প্রদান করবেন, সরকারও সেই পরিমাণ চাঁদা প্রদান করবেন তাদের সমতা স্কিমের একাউন্টে। তাদের একাউন্টে যেন অনেক টাকা জমে তার জন্য।

pension scheme system for all
আরো পড়তে ক্লিক করুন: ডেঙ্গু সংক্রমণ থাকে বাঁচতে করণীয়

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু:

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার, তাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনের তফসিলে উল্লেখ করেছিলেন, সবার জন্য সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা চালু করার কথা। এবার ২০২৩ সালের ১৭-ই আগস্ট চালু হতে যাচ্ছে সার্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। যেদিন উদ্বোধন হবে, সেই দিন থেকেই সাধারণ গ্রাহকরা চাঁদার টাকার জমা করতে পারবেন।

তবে প্রথম দিন সকল গ্রাহক তাদের চাঁদার টাকা জমা দিতে পারবেননা। কিছু বিশেষ গ্রাহককে ঠিক করা হয়েছে। শুধু তারাই পারবেন। কিছু জেলা বাছাই করা হয়েছে। মোট ৮টি জেলা বাছাই করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো পাবনা, বরগুনা, ময়মনসিংস, বাগেরহাট, রংপুর, সিলেট, রাঙামাটি, গোপালগঞ্জ। এসব জেলার জেলা প্রশাসক মহোদয়গণকে অবহিত করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

দেশের বাইরের কিছু মিশনেও চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে আছে, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, ও জেদ্দায় থাকা বাংলাদেশ মিশন রয়েছে। মডেল পেনশনার হিসেবে এতোমধ্যে একজনকে ঠিক করেছেন বলে জানিয়েছেন, পাবনার জেলা প্রশাসক মহোদয়।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা (স্কিমের) আওতায় কারা আসবেন?

বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তারপর যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তারাই সার্বজনীন পেনশনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আর ৬০ বছরের পর থেকে আজীবন তারা পেনশনের সুবিধাভোগ করতে পারবেন। এখন ৫০ বছরের অধিক বয়সীদের কে নিয়েও চিন্তা করছে সরকার। তাদের জন্য একটি শর্ত প্রযোজ্য তা হলো টানা দশ বছর চাঁদা জমা দিতে হবে। দশ বছর চাঁদা জমা দিলে তারাও পেনশন সুবিধা পাবেন।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা

পেনশন স্কিম এবং চাঁদার পরিমাণ:

প্রগতি:

প্রগতির স্কিমের সদস্যদের জন্য চাঁদার পরিমাণ হলো ১-হাজার টাকা থেকে ১০-হাজার টাকা।

সুরক্ষা:

সুরক্ষা স্কিমের সদস্যদের জন্য চাঁদার পরিমাণ হলো ১-হাজার টাকা থেকে ১০-হাজার টাকা।

প্রবাসী:

প্রবাসী স্কিমের সদস্যদের জন্য চাঁদার পরিমাণ হলো ৫-হাজার টাকা থেকে ১০-হাজার টাকা। প্রবাসী স্কিমের চাঁদার টাকা গ্রাহক চাইলে মার্কিন ডলার, ইউরো, কুয়েতি দিনার ইত্যাদি বিদেশী মুদ্রায় প্রদান করতে পারবেন।

সমতা:

সমতা স্কিমের সদস্যদের জন্য চাঁদার পরিমাণ হলো ৫-শত টাকা মাত্র। তবে এই  সমতা স্কিমে একাউন্টে গ্রাহকের সাথে সাথে সরকারও ৫-শত টাকা করে প্রদান করবে।  

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা (স্কিমে) চাঁদার টাকা কিভাবে প্রদান করবেন?

আপনি চাইলেই ঘরে বসেই আপনার পেনশনের স্কিমের চাঁদার টাকা জমা দিতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে পারবেন। আপনি যেন ঘরে বসে পেনশন স্কিমের চাঁদার টাকা জমা দিতে পারেন। তার জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি পেনশন স্কিম চালু করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে পেনশন স্কিমের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন সফল হলে আপনাকে একটি নাম্বার দেওয়া হবে। এই নাম্বারটি ব্যবহার করে স্কিমের চাঁদার টাকা পরিশোধসহ সকল কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি গ্রামে বসবাস করেন, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। আপনি যদি রেজিস্ট্রেশন করতে না পারেন তাহলেও কোনো সমস্যা নেই।

কারণ আপনাকে সাহায্য করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে আছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো। এব্যপারে সকল সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। আর স্কিমের টাকা নগদ, বিকাশসহ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে দিতে পারবেন। তাছাড়াও ব্যাংকের মাধ্যমে তো চাঁদার টাকা দিতে পারবেনই।

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা (স্কিম) বাস্তবায়ন করতে সমঝোতা চুক্তি সই:

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সার্বজনীন পেনশন স্কিল বাস্তবায়ন করতে সমঝোতা চুক্তি করছে পাঁচটি সংস্থার সাথে। গতকাল বুধবার, ০৯- আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখে, বাংলাদেশ সচিবালয়ে এই সমঝোতা চুক্তি সই হয় দুই পক্ষের মাঝে। সমঝোতা চুক্তিতে সই করা সংস্থাগুলো হলো;

  • বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড
  • ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর
  • জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়
  • সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
  • বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়

সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা (স্কিম) বাস্তবায়নে বিধিমালা হচ্ছে:

সার্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা হচ্ছে। এছাড়াও পেনশন স্কিম গ্রহণ করার জন্য যোগ্যতা এবং সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য তিনটি বিধিমালা হচ্ছে। এই বিধিমালাগুলো হলো

  • কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা
  • সার্বজনীন পেনশন স্কিমে যোগদান এবং নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিধিমালা
  • আর সর্বশেষ হলো জাতীয় পেনশন স্কিম বিধিমালা

এই বিধিমালাগুলো এখনো প্রজ্ঞাপন আকারে পাশ হয়নি। বিধিমালাগুলো ধারা উপ-ধারা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। আলোচনার জন্য এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলে, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তারপর প্রজ্ঞাপন আকারে পাশ হবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন। অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রনলয়।

‍”সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বড় উপহার”। বর্তমান অর্থ-মন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তাফা কামাল উল্লেখ করেন। এটা বাস্তবায়ন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। দেশের প্রায় ৮০% মানুষ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তাদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে পারলে, তাদের বৃদ্ধা বয়সে একটি অবলম্বন হবে।

তাদের একটি স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে। এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ৫-১০ পর্যন্ত ইর্য়ারলি ইনক্রিমেন্ট ব্যবস্থা থাকছে। কেউ যদি ৬০ বছর পর্যন্ত পেনশনের চাঁদার টাকা প্রদান করেন। তাহলে ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশনের টাকা পাবেন। যদি তিনি ৭৫ বছরের আগে মৃত্যুবরণ করেন। তাহলে তাঁর নমিনি পাবেন।

আবার কেউ যদি ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যান। তাহলে তাঁর জমানো টাকার উপর ৫০% মুনাফাসহ ফেরত দেওয়া হবে। যা তাঁর মনোনিত ব্যক্তি তুলতে পারবেন। সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা চালু হলে। এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতাগুলোর আর প্রয়োজন হবেনা।

আরো পড়ুন: ডেঙ্গু সংক্রমণ থেকে বাঁচতে করণীয়।

                ফাইভার একাউন্ট তৈরির উপায়।

                সিপিএ মার্কেটিং করে ইনকাম করুন।

                ফেসবুক পেজের নাম

উপসংহার:

পরিশেষে বলতে পারিযে, সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা, সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য কল্যাণকর একটি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের সুষ্ঠ বাস্তবায়ন করতে পারলে, স্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। সার্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা নিয়ে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন। এমনই সব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য আমাদের সাইটটের অন্যান্য পেজ ভিজিট করুন। সার্বজনীন পেনশনে স্কিমে রেজিস্ট্রেশন করতে Click Here

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top