ফেসবুক মার্কেটিং হলো, ফেসবুককে ভিত্তি করে মার্কেটিং করার প্রক্রিয়াকে বুঝায়। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করা, পণ্য বিক্রয় করা, ব্যান্ড সচেতনা বাড়ানো ইত্যাদি কাজই হলো ফেসবুক মার্কেটিং। Facebook Marketing দুইভাবে করা যায়- এক; ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং, দুই; পেইড ফেসবুক মার্কেটিং। আজকের পোস্টে আমরা Facebook Marketing এর বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বর্তমানে প্রতিটি মানুষের হাতে স্মার্টফোন। স্মার্টফোনে স্যোশাল মিডিয়া অ্যাপস আছে। সকল স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। এসব অ্যাপসের মধ্যে, ফেসবুক সবথেকে জনপ্রিয়। পৃথিবীতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩.০৩ বিলিয়ন। বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৪৯.৩৯ মিলিয়ন। তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফেসবুক চালান।
এই বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে কাজে লাগাচ্ছে ফেসবুক। মার্কেটিংয়ের এর ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। এখন আর মানুষ হ্যান্ড মাইকে প্রচার করে না। পোস্টার বিলবোর্ড ফেস্টুনকে ছাপিয়ে নতুন পদ্ধতি চলে এসেছে, যার নাম Facebook Marketing। ডেইলি ৫০০ টাকা ইনকাম ২০২৪ জানতে পড়ুন।
ফেসবুক মার্কেটিং কি:
প্রথমেই আমরা বলেছি, ফেসবুক মার্কেটিং হলো, ফেসবুক এবং মার্কেটিং, এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে একটি নতুন ধারণা। ফেসবুক মার্কেটিং হলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ানো, পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকেই এফ-কর্মাস বলে
ফেসবুক একটি স্যোশালা মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। স্যোশাল মিডিয়া সাইটটের মধ্যে ফেসবুক সবথেকে জনপ্রিয়। প্রচুর মানুষ এই সাইটে যুক্ত থাকেন। আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ফেসবুক। স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম, ২০২৪ সালের ট্রেন্ডিং ট্রপিক জানতে পড়ুন।
অন্যদিকে, মার্কেটিং হলো পণ্যের বিপণন করা। বিভিন্ন উপায়ে পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে বিপণন করাই হলো মার্কেটিং। যেমন, টেলিভিশনে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া। আবার বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচার করা। এগুলো হলো ট্রেডিশনাল মার্কেটিং।
মার্কেটিং যখন, স্যোশাল মিডিয়া সাইট, ফেসবুকের মাধ্যমে করা হয়, তখন তাকে ফেসবুক মার্কেটিং বলে। Facebook Marketing করার জন্য প্রয়োজন একটি বিজনেস পেজ। এই পেজের মাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট করতে হবে। পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করার মতো ভিডিও তৈরি করুন। এসব ভিডিও ফেসবুক শেয়ার করনু। ভালো ভালো ইমেজ পোস্ট করুন।
যেসকল গ্রাহকের কাছে প্রচার করতে চান, সেই সব বিষয়ে গ্রুপে জয়েন হতো হবে। গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট শেয়ার করুন। অন্যের পোস্টে কমেন্টস করুন। নিজে গ্রুপ তৈরি করুন। এভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার চালালে, অনেক মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব। এজন্য সকল প্রতিষ্ঠান Facebook Marketing করে থাকে।
ফেসবুক মার্কেটিং কতো প্রকার:
Facebook Marketing- প্রকারভেদ করতে গেলে, দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন;
১. ফ্রি-Facebook Marketing
২. পেইড Facebook Marketing
ফ্রি-ফেসবুক মার্কেটিং:
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, ফ্রি-ফেসবুক মার্কেটিং হলো বিনামূল্যে মার্কেটিং করা। কোনো খরচ না করে, পণ্যের প্রচার করা। হ্যাঁ, ফ্রি- Facebook Marketing করার জন্য কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হয় না। ঘরে বসে হাতের কাজ করে টাকা আয় করতে পড়ুন।
নিজের ফেসবুক প্রফাইলে, পেজে পণ্যের প্রচার করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি যে, আমার একটি পণ্য আছে। এই পণ্যের প্রচার করতে চাই। এই পণ্যের প্রচারের জন্য খরচ করবো না। তাহলে, কিভাবে প্রচার করবো?
প্রচার করার জন্য ফেসবুক পেজে এবং নিজের প্রফাইলে নিয়মিত পণ্যের বর্ণনা লিখে, পণ্যের ইমেজ, এবং ভিডিওসহ পোস্ট করবো। আমার পণ্যের সম্ভাব্য গ্রাহক হতে পারেন, এমন গ্রুপ খুঁজে বের করবো। সেই সব গ্রুপে জয়েন করবো। আমার পেজের পোস্টগুলো শেয়ার করবো। পোস্ট করবো।
আমার এসব পোস্ট যাদের কাছে যাবে, তারা সবাই আমার পণ্য সর্ম্পকে জানতে পারবেন। যাদের প্রয়োজন, তারা পণ্যটি ক্রয় করবেন। এটাই হলো ফ্রি-Facebook Marketing। কারণ, এখানে কোনো টাকা খরচ করতে হলো না।
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং:
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং করতে, খরচ করতে হয়। যেমন, খরচ করবেন, তেমন রেজাল্ট পাবেন। মূলত, যাদের অনেক পণ্য আছে। যারা বড় পরিষরে ব্যবসা করেন, দ্রুত রেজাল্ট চান, তাদের জন্য পেইড Facebook Marketing ভালো কাজ করে।
ফেসবুকে এডস দেয়ার জন্য ফেসবুক পেইড এডসের ব্যবস্থা আছে। যারা এডস দিতে চান, তারা ফেসবুকের এডস ক্যাম্পেইন করতে পারেন।
পেইড এডস দিয়ে সম্ভাব্য গ্রাহককে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন। যেমন, আপনার মেয়েদের জুয়েলারি পণ্য আছে। এর বিজ্ঞাপণ ছেলেদের দেখালে বিক্রয় হবে না। আবার যাদের বয়স চল্লিশ এর বেশি তারা এসব জুয়েলারি পণ্য কিনবে না। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের এই পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহ কম থাকবে। এদের এডস দেখাবো না। তার জন্যই পেইড এডস।
ফেসবুক পেইড এডসের মাধ্যমে বয়স, লিঙ্গ, গ্রাহকের অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রুচিবোধ, অর্থনৈতিক অবস্থা, কোন ডিভাইস দিয়ে আপনার এডস দেখছে, এসব কিছু নির্ধারণ করে এডস চালাতে পারবো। ফলে আমার খরচ কম হবে। দ্রুত রেজাল্ট পাবো।
ফ্রি-ফেসবুক এব পেইড ফেসবুক মার্কেটিংয়ের পার্থক্য:
উভয় মার্কেটিংয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। আবার কিছু মিলও আছে। মিল হলো উভয় মার্কেটিং প্রক্রিয়ার উদেশ্য হলো পণ্যের প্রচার করা। ব্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ানো, এবং পণ্য বিক্রয় করা। আর কিছু পার্থক্যও আছে। এখন আমরা একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরছি ফ্রি-ফেসবুক মার্কেটিং এবং পেইড Facebook Marketing এর মধ্য মূল্য পার্থক্যসমূহ;
ক্রমিক নং | ফ্রি-Facebook Marketing | পেইড-Facebook Marketing |
১ | টাকা খরচ হয় না | টাকা খরচ হয় |
২ | অনেক সময় ব্যয় করতে হয় | বেশি সশয় ব্যয় করতে হয় না। |
৩ | ভালো রেজাল্ট আছে না। | অনেক ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। |
৪ | সম্ভাব্য গ্রাহক পাওয়া যায় না। | সম্ভাব্য গ্রাহক পাওয়া যায় |
৫ | ব্যান্ড অ্যায়ারনেস বাড়ানো যায় না। | ব্যান্ড অ্যায়ারনেস বাড়ানো যায় |
৬ | অর্গানিক ভিজিটর পাওয়া যায় | অর্গানিক ভিজিটর পাওয়া যায় না। |
৭ | ফ্রি মেথড খুবই সহজ | পেইড মেথড অনেক জটিল, সবাই পারে না। |
৮ | নির্দিষ্ট এলাকায় প্রচার চালানো যায় | যেকোনো যায়গায় প্রচার চালানো যায়। |
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর পদ্ধতি:
এখন আমরা আলোচনা করবো পেইড ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে। কারণ পেইড মার্কেটিং করেই দ্রুত রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব। আবার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে পেইড মার্কেটিং এর কাজ পাওয়া যায়। তাই পেইড Facebook Marketing আমাদের জানা প্রয়োজন।
যখন আমরা একটি ফেসবুক পেইড এডস সেট করতে যাবো, তখন আমাদের সামনে ৬-টি অপশন আসবে। আমরা ব্যবসার জন্য কোন কাজটি করতে চাই, তাই জানতে চাইবে ফেসবুক।
- Awareness; ব্যবসার সুনাম বাড়ানোর জন্য। রিচ বাড়ানোর জন্য। ব্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য এটি সিলেক্ট করা হয়।
- Traffic; যাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর, টাফিক প্রয়োজন তারা ট্রাফিক সিলেক্ট করে এডস পরিচালনা করেন।
- Leads; যাদের লিডস এর প্রয়োজন, যেমন; গ্রাহকের নাম, তথ্য, ইমেইল,এবং মোবাইল নাম্বার তারা লিডস অপশন সিলেক্ট করে পেইডস এডস মার্কেটিং করে থাকেন।
- Sales; যারা নিয়মিত অনলাইন থেকে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করেন, তাদের এই এডস দেখানেো হয়। তাই, যারা পণ্য বিক্রয় করতে চান, তাদের এই অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
- Engagement: যাদের পোস্টে এঙ্গেজমেন্ট প্রয়োজন যেমন, লাইক, কমেন্টস, শেয়ার, এবং ফলো করার জন্য এই অপশন সিলেক্ট করুন।
- App Promotion: যাদের বিভিন্ন প্রকার মোবাইল অ্যাপ আছে। তারা প্রমোশন চালানোর জন্য এই অ্যাপ প্রমোশন অপশন সিলেক্ট করুন।
এই ছয়টি অপশন পাবো। পেইড মার্কেটিং করার জন্য যেকোন একটি সিলেক্ট করতে হবে। আলাদা আলাদা ছয়টি ক্যাটাগরিতে এডস সেট করা যায়। আপনার যেটার প্রয়োজন সেটা সিলেক্ট করবেন।
কম খরচে ফেসবুক মার্কেটিং:
কম খরচে ফেসবুক মার্কেটিং করার কথা ভাবছেন। তাহলে, আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। কারণ, খরচ না করলে কষ্ট করতে হবে। কিভাবে শিখবেন, বই পড়তে হবে। ব্লগ পোস্ট পড়তে হবে। ইউটিউবে ভিডিও দেখতে হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান, যেখানে অল্প খরচে, Facebook Marketing শিখায়। এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে, শিখুন।
আর নিয়মিত ফেসবুক মার্কেটিং চর্চা করুন। চর্চা করার জন্য ফ্রি-Facebook Marketing এর পাশাপাশি, পেইড ক্যাম্পেই রান করতে পারেন। তাহলে, অল্প টাকা খরচে শিখা হয়ে যাবে। কোথায় ভুল হচ্ছে, বুঝতে পারবেন।
শুধু ভিডিও দেখে, ব্লগ পোস্ট পড়ে হবে না। প্যাকটিক্যাল করতে হবে। তাই চার্চার করার জন্য একটি পেজ তৈরি করুন। ফ্রি-Facebook Marketing করার সাথে পেইড এডস ক্যাম্পেইন রান করুন।
ফেসবকু মার্কেটিং শিখে ইনকমের উপায়:
ফেসবুক মার্কেটিং হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অংশ। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যপক চাহিদা। আপনার যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে ফেসবুক দেখবেন প্রতি ৫-৭ পোস্ট এর পরে একটি করে পেইড এডস আসছে।
ইউটিউববেও একই অবস্থা। তাই বর্তমানে পেইড এডস এর জনপ্রিয়তা চরম। Facebook Marketing শিখলে, বসে থাকতে হবে না। ঘরে বসে ইনকাম করতে পারবেন।
নিজের ব্যবসার প্রচার চালাতে পারবেন। নিজের কোনো ব্যবসা বা পণ্য না থাকলেও পণ্যের প্রচার চালিয়ে, আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ভিজিট করুন। দেখবেন, ফেসবুক মার্কেটিং এর কতো কাজ আছে।
আপনি কাজ করে শেষ করতে পারবেন না। পেইড এডস মার্কেটিং এর কাজ করে একজন মাসে ৫০০- ১০০০ ডলার আয় করতে পারে সহজেই।
উপসংহার:
ফেসবুক মার্কেটিং এখন একটি ট্রেন্ডিং ট্রপিক। তাই আমি বলবো, ফ্রিল্যান্সি কাজ , বা নিজের পণ্যের প্রচার করার জন্য, Facebook Marketing শিখা উচিৎ। আজকের পোস্টে ফ্রি- এবং পেইড ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশাকির আপনাদের কাজে লেগেছে।
আমাদের আজকের পোস্টটি ভালো লাগলে, শেয়ার করে রাখুন। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়তে সাইটটি ভিজিট করুন। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।